বিস্তারিত নির্দেশিকা: ড. মুহাম্মদ শহিদুল্লাহর কবর দর্শন, ঢাকা, বাংলাদেশ: ইতিহাস, গুরুত্ব, দর্শক টিপস এবং স্মরণীয় অভিজ্ঞতার জন্য যা কিছু পর্যটকদের জানা উচিত
তারিখ: ৩১/০৭/২০২৪
ভূমিকা
ঢাকার ঐতিহাসিক স্থানগুলি বাংলাদেশের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সঙ্গে একটি অসাধারণ অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করে। এর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান হল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদুল্লাহ হলে অবস্থিত ড. মুহাম্মদ শহিদুল্লাহর কবর, যিনি একজন বিখ্যাত ভাষাতত্ত্ববিদ যিনি বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে অমলিন চিহ্ন রেখে গেছেন। ১০ জুলাই, ১৮৮৫ সালে বেঙ্গল-এর ২৪ পরগনা জেলায় জন্মগ্রহণকারী ড. শাহিদুল্লাহর আকাডেমিক পদ্ধতিগুলি ঐতিহ্যবাহী মکتব সিস্টেম থেকে শুরু করে ভাষাতত্ত্ব ও ভাষাবিজ্ঞান ক্ষেত্রের উল্লেখযোগ্য অর্জনে শেষ হয় (বাংলাপিডিয়া)। তাঁর প্রথমিক গবেষণা বাংলা ভাষার উৎপত্তি প্রমাণ করেছে, যা তাঁকে দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম শ্রেণির গবেষকদের একজন হিসাবে স্বীকৃতি প্রদান করেছে (প্রথম আলো)। এই ব্যাপক নির্দেশিকাটি ড. মুহাম্মদ শাহিদুল্লাহর কবর দর্শনের জন্য সব প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদান করতে চায়, যার মধ্যে রয়েছে ইতিহাস, সাংস্কৃতিক গুরুত্ব, দর্শক টিপস এবং আরও অনেক কিছু।
বিষয়সূচী
ইতিহাসগত পটভূমি
প্রথম জীবন ও শিক্ষা
ড. মুহাম্মদ শাহিদুল্লাহ ১০ জুলাই, ১৮৮৫ তারিখে পশ্চিমবঙ্গের ২৪ পরগনা জেলার Peyara গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা, মুনশি মোফিজুদ্দিন আহমেদ, পীর গোরাচাঁদের মাজারের পরিচর্যাকারী ছিলেন। শাহিদুল্লাহর প্রথম শিক্ষা ঐতিহ্যবাহী মکتব ব্যবস্থায় শুরু হয়, যেখানে তিনি বই ও খাতা দিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। পরে তিনি স্নাতক পরীক্ষা ১৯০৪ সালে শেষ করেন এবং কলকাতার প্রেসিডেন্সী কলেজে উচ্চশিক্ষা লাভ করেন। ১৯১২ সালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তুলনামূলক ভাষাবিজ্ঞানে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন (বাংলাপিডিয়া)।
শিক্ষা ও পেশাগত জীবন
ড. শাহিদুল্লাহর একাডেমিক জীবন গুরুত্বপূর্ণ অর্জনের সাথে যুক্ত ছিল। ১৯১৪ সালে তিনি বি.এল. ডিগ্রি অর্জন করেন এবং ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা এবং সংস্কৃত বিভাগের লেক্টার হিসাবে যোগদান করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর সময়কাল জাতীয় ভাষার ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ১৯২৫ সালে তিনি প্রমাণ করেন যে বাংলা গৌড় বা মাঘধী প্রাকৃত থেকে উদ্ভূত হয়েছে (প্রথম আলো)।
ভাষাতত্ত্বে অবদান
ড. শাহিদুল্লাহর ভাষাতত্ত্বে অবদান ব্যাপক ও প্রভাবশালী ছিল। তিনি বাংলা ফোনেটিক্সের ক্ষেত্রে একজন গুরুরূপে পরিচিত এবং ১৯২৮ সালে প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা করেছিলেন। জামায়াতের কথাবলি নিয়ে তাঁর গবেষণা এবং ১৯২৬ সালে প্রকাশিত “বাংলা ভাষার ঐতিহাসিক ব্যাকরণ” গ্রন্থটি বাংলা ভাষার অ-আর্য সম্পর্কগুলো তুলে ধরে (দ্য ডেইলি স্টার)।
অবদান ও স্বীকৃতি
ড. শাহিদুল্লাহ বাংলাদেশে ভাষাবিদ হিসেবে প্রাধান্য লাভ করেছিলেন এবং তাঁর গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য ব্যাপক স্বীকৃতি লাভ করেছেন। ২০০৪ সালে একটি বিটি সংবাদদাতা জরিপে তাঁকে সর্বকালের ১৬তম মহান বাঙালি হিসেবে স্থান দেওয়া হয়, যা তাঁর স্থায়ী প্রভাবের প্রমাণ (রোর মিডিয়া)।
শেষ বছর ও সমাহিতকরণ
ড. মুহাম্মদ শাহিদুল্লাহ ১০ জুলাই, ১৯৬৯ তারিখে ঢাকা, বাংলাদেশে মৃত্যু বরণ করেন। তাঁকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদুল্লাহ হলে সমাহিত করা হয়, যা তার সম্মানে একই বছর নামকরণ করা হয়। তার কবর দীর্ঘদিন ধরে অযত্নে পড়ে থাকলেও সম্প্রতি তার কবরটি পুনরুদ্ধার সবচেয়ে গুরুতর প্রয়োজন (লন্ডোনি)।
শহিদুল্লাহ হল
শহিদুল্লাহ হলের গুরুত্ব
শহিদুল্লাহ হল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি প্রতিষ্ঠাকৃত আবাসিক হলের মধ্যে একটি। ১৯২১ সালে লাইটন হল হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং পরে ঢাকা হল এবং নগরে শাহিদুল্লাহ হল নামকরণ হয় ১৯৬৯ সালের পরে, ড. শাহিদুল্লাহর মৃত্যুর পর। হলটি ৫ একর জায়গা জুড়ে বিভিন্ন সুবিধার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে, যার মধ্যে একটি লাইব্রেরি, পঠনকক্ষ, বিশ্রামের ঠাঁই এবং মসজিদ রয়েছে। এটি প্রায় ১৫০০ শিক্ষার্থীকে আঁকড়ে ধরে, প্রধানত বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী (উইকিপিডিয়া)।
দর্শক তথ্য
দর্শক টিপস
ড. মুহাম্মদ শাহিদুল্লাহর কবর দর্শনের জন্য পরিকল্পনা করার সময়, নির্দিষ্ট কয়েকটি বিষয় জানা জরুরি:
- অবস্থান: কবরটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদুল্লাহ হলের মধ্যে অবস্থিত, কুরজিহাল এর পিছনে।
- ভ্রমণের সেরা সময়: নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত শীতল ও শুষ্ক মাসগুলি ঢাকা দর্শনের জন্য আদর্শ কারণ এই সময় আবহাওয়া আরও উপভোগ্য (We Free Spirits)।
- অ্যাক্সেসযোগ্যতা: এই স্থানে বিভিন্ন পরিবহন মাধ্যম যেমন বাস, ট্যাক্সি এবং অটো-রিকশা ব্যবহার করে যাওয়া যায়। ফার্মগেট থেকে জাতীয় স্মৃতিসৌধে বাসের ভাড়াটি প্রায় ৬০ টাকা এবং ট্যাক্সি ভাড়া প্রায় ৩৫০ টাকা (Traveling BD)।
- সম্মান এবং শিষ্টাচার: যেহেতু কবরটি একটি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের মধ্যে অবস্থিত, দর্শকদের উচিত সম্মানজনক আচরণ রাখা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের দ্বারা প্রদত্ত কোনও নির্দেশিকা অনুসরণ করা।
দর্শন ঘণ্টা এবং টিকিট
- দর্শন ঘণ্টা: সাধারণত শাহিদুল্লাহ হল এবং কবরটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম চলাকালে দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত থাকে, তবে বিশেষ দর্শন ঘণ্টার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে 문의 করে নিশ্চিত হওয়া উচিত।
- টিকিট: শহিদুল্লাহ হল বা ড. শাহিদুল্লাহর কবর দর্শনের জন্য কোনও প্রবেশ ফি প্রয়োজন হয় না।
নিকটবর্তী আকর্ষণগুলি
শহিদুল্লাহ হল দর্শনের সময়, ঢাকার অন্যান্য ঐতিহাসিক স্থান এবং আকর্ষণগুলি দেখতে পারেন, যেমন:
- কুরজিহাল: একটি স্থাপত্যের রত্ন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ একাডেমিক ভবন।
- আহছান মঞ্জিল: পিংক প্যালেস নামে পরিচিত, এটি একটি ঐতিহাসিক স্থান এবং মিউজিয়াম।
- লালবাগ কেল্লা: 17 শতকের মোগল কেল্লা যা শহরের ইতিহাসের অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করে।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী
প্র: শহিদুল্লাহ হলের দর্শন ঘণ্টা কী? এ: শাহিদুল্লাহ হল সাধারণত বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম চলাকালে দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত থাকে। বিশেষ দর্শন ঘণ্টার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
প্র: শহিদুল্লাহ হল দর্শনের জন্য কোনও প্রবেশ ফি আছে কি? এ: না, শহিদুল্লাহ হল বা ড. মুহাম্মদ শাহিদুল্লাহর কবর দর্শনের জন্য কোনও প্রবেশ ফি প্রয়োজন হয় না।
প্র: আমি শহিদুল্লাহ হল কীভাবে পৌঁছাতে পারি? এ: এই স্থানটি বিভিন্ন পরিবহন মাধ্যমের মাধ্যমে সহজে পৌঁছানো যায়, যেমন বাস, ট্যাক্সি এবং অটো-রিকশা। ফার্মগেট থেকে জাতীয় স্মৃতিসৌধে বাসের ভাড়া প্রায় ৬০ টাকা এবং ট্যাক্সি ভাড়া প্রায় ৩৫০ টাকা।
সমাপ্তি
ড. মুহাম্মদ শাহিদুল্লাহর ভাষাতত্ত্ব, শিক্ষা এবং বাংলা সংস্কৃতির প্রতি অবদানের জন্য তাঁর কবর শীর্ষস্থানীয়। শহিদুল্লাহ হলের সাইটটি তাঁর স্থায়ী উত্তরাধিকার এবং বাংলা ভাষা এবং সাহিত্যের ওপর তাঁর গভীর প্রভাবের একটি স্মারক। এই স্থানটি পরিদর্শন করার জন্য একটি অনন্য সুযোগ প্রদান করে যা দক্ষিণ এশিয়ার এক গুণী গবেষককে সম্মান জানাতে এবং বাংলাদেশের সমৃদ্ধ ইতিহাস এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে প্রতিফলিত হতে পারে। আজই আপনার দর্শনের পরিকল্পনা করুন এবং ড. শাহিদুল্লাহর উত্তরাধিকারকে উপভোগ করুন (The Daily Star)।
উত্স
- বাংলাপিডিয়া। ২০২৩। শহীদুল্লাহ, মুহাম্মদ সূত্র
- প্রথম আলো। ২০২৩। ড. মুহাম্মদ শাহিদুল্লাহর কৃতিত্ব সূত্র
- দ্য ডেইলি স্টার। ২০২৩। ড. মুহাম্মদ শাহিদুল্লাহ: একটি শ্রদ্ধাঞ্জলি সূত্র
- রোর মিডিয়া। ২০২৩। ড. মুহাম্মদ শাহিদুল্লাহর জীবনী সূত্র
- উইকিপিডিয়া। ২০২৩। ড. মুহাম্মদ শাহিদুল্লাহ হল সূত্র
- লন্ডোনি। ২০২৩। ড. মুহাম্মদ শাহিদুল্লাহর মৃত্যুবরণ ও সমাহিতকরণ সূত্র
- We Free Spirits. ২০২৩। ঢাকা ভ্রমণ নির্দেশিকা সূত্র
- Traveling BD. ২০২৩। জাতীয় শহীদ স্মৃতি স্মৃতিসৌধ ভ্রমণ গাইড সূত্র
- I Wandered. ২০২৩। ঢাকা তাঁর আগ্রহ সূত্র